প্রতিশ্রুতিশীল কবি আকতারুল ইসলামের এক গুচ্ছ কবিতা



 অসম সমর

৪ অক্টোবর ২০২১, রংপুর।


তোমাদের অন্তরীক্ষে চন্দ্রের লুকোচুরি খেলা

আমার গগনে কৃষ্ণ মেঘের বিরহ মেলা।

সন্ধ্যার আসমানে উঠেছিল একফালি চাঁদ

মেঘের তান্ডবে তার আনন্দ বিষাদ।


চাঁদের ক্ষণিক হর্ষ মেঘের একটুখানি না সহে

জমাট বেঁধে তাকে সদলবলে ঘিরে ধরে।

রবির প্রতাপে দিনে বেচারা চাঁদ থাকে নিষ্প্রভ

রাত্রি নামলে মেঘ মহোদয় ভাঙ্গে তার তপ।


এভাবে চলে চাঁদ ও মেঘের চিরন্তনী অসম সমর

বাস্তুতান্ত্রিক বিঘ্নে উলুখাগড়ার যাতনা  অঝোর।


হিসেব নিকেশ

২৭ ডিসেম্বর ২০২১, রংপুর।

-------------------------------------

সকালে ফুটে যে ফুল অপার সজীবতা নিয়ে,

বিকালের রৌদ্রছটায় তার লাবণ্য যায় ম্লান হয়ে।

নবজাতকের আগমনে ধরনীতে লেগেছিল যে বার্তা,

বার্ধক্য এসে কেড়ে নিল তার প্রতিষ্ঠার আশা।


দুদিনের দুনিয়ার ধূলো খাতায় জমা পাহাড়সম হিসাব,

ছাড়িবার মন্ত্রে অদ্ভুত নিয়মে মেলে না কোন অবকাশ।

তিন অংশে বিভক্ত জীবনের এক অংশ যায় ঘুমে,

মৃত্যু তাই রোজ এসে দরজার প্রাচীরখানা যায় চুমে।


মৃত্তিকা গড়া কায়া হবে জানি মৃত্তিকায় চিরতরে বিলীন,

অনেক রঙের আঁকা স্বপ্ন জগত হলো তাই সহসাই মলিন।

হিসাবি খাতাখানা আজকের দিনে করি জনমের তরে বন্ধ,

স্বার্থের জটিলতা কেটে ওপার জগতে আর থাকবে না দ্বন্দ্ব।


উন্নতির সন্ধানে


২৯ এপ্রিল ২০২১, নিউমার্কেট এলাকা, রাজশাহী।


সুন্দর ভাবনার জগতে আমি বড়ই কদর্য ও কিম্ভূতকিমাকার,

না পারি সাজতে না বাজতে, যখন সৌন্দর্য মানেই একটু বেশি মাখামাখি

কিংবা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি। আমি থাকি স্রোতের বিপরীতে। সুন্দর হয়ে 

ওঠা আমার আর হয়না! সুন্দর ভাবনার জগতে আমি বড়ই বেমানান, 

বড়ই বেরসিক। তাই হন্য হয়ে তন্ন তন্ন করে, সফলতা খুঁজে পাই না।

সবাই চায় একটু আলগা খাতির, একটু বেশি তেলমারা। 

তোষামোদির গতির চোটে আমি যে ভাই বড়ই তালকানা।

সুন্দর করে ভাবতে শেখা আর হলো না, তাইতো আমার

কপাল পোড়া, উন্নতি খুঁজে পেলাম না। 

ওরা সবাই কথা জানে সুন্দর করে সাজতে জানে

কথার পিঠে কথা বানে কিন্তু আমি যে ওসব পারিনা।

তাইতো আমার এই জীবনে কোন উন্নতি আর হলো না।

ওরা দেখতে ভীষণ ভালো, সাক্ষাৎ পীর, সুফি কিংবা দরবেশ

সত্য মিথ্যার প্যাচের খেলায় তকদির হাসিল করতে জানে বেশ।

আমি হলাম সাক্ষী গোপাল, চেয়ে দেখি আর আফসোস করি

মনের কথা গোপন করি ,একটু আধটু অভিনয় পারি ,ভালো 

থাকার ভান যে করি। তবুও কিছুতেই কিছু হয়না। সুন্দর এই

জগতে আমার উন্নতি আর হলো না। হতে হবে আজ্ঞাবহ, দাসের 

মতো তল্পিবাহক, তোষামোদির অধিনায়ক। কিন্তু আমি 

যে এসব হতে পারিনা! তাইতো আমার এমনদিনে উন্নতি আর হলোনা।


সফলতা নামা

০৮ অক্টোবর ২০২১, রংপুর।


লজ্জার দেয়ালটা টপকানো জানতে হয়

মুখের লাগাম খুলে একটু বেসামাল বাকপটু হতে হয়

জানতে হয় কীভাবে মরু সাহারায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টির

এক দুর্দান্ত কাব্য রচিত হয়।

জানতে হয় কীভাবে পদ্মার চরে চোখ ঝলসানো সিলিকা

দিয়ে হিরক মালা গাঁথা হয়।

জানতে হয় কীভাবে মরা কপোতাক্ষে সুবিশাল টাইটানিক

ভাসানোর কাহিনী রটানো হয়।

জানতে হয় কীভাবে গোবর গনেশদের গলায় সনদ পরিয়ে

জাতির কর্ণধার বানানো হয়‌।


শিখতে হয় কীভাবে রাতের ভেতরে দিন ঢুকিয়ে মসনদ

হাসিলের মতলব আঁটতে হয়।

বুঝতে হয় কীভাবে তেলের মালিশে পাদুকা পালিশে

ভাগ্য চাকা সচল হয়।

কীভাবে মনিবের চোখে মুখে শব্দ বালি ছিটিয়ে

উপরের সিঁড়িতে উঠে বসতে হয়,

জানতে হয় সহসা নিম্নচাপে সৃষ্ট বৃষ্টিতে কৌশলী

ছাতাটি কোন দিকে ধরতে হয়।

বঙ্গদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা পীর

দরবেশের মৌসুমী মুরীদ হতে হয়।


সফলতা এখানে ভাগ্যগুনে মোসাহেবদের হস্তে

নিজে নিজে এসে ধরা দেয়।

এদেশে সফলতার কাহিনী বেহায়া কুশীলবদের

ইশারায় ব্যর্থদের নামে রচিত হয়।

এখানকার আকাশ বড়ই ছদ্মবেশী চতুর অতিশয়

সাদা মেঘে রঙিন বৃষ্টির বন্যা বয়।


উপমায় প্রিয়তমা

০৭ মার্চ ২০২২, রংপুর।


তুমি আমার রক্তে প্রবাহিত 

হিমোগ্লোবিনের তপ্ত ধারা।

নীলাকাশে সাজানো রাত্রি জাগা

দেদীপ্যমান রূপালি তারা।


তুমি আমার ফাগুন হাওয়ায়

বৃদ্ধার চিরাচরিত চাদর মুড়ি

তুমি আমার উষ্ণ বাতাস খেতে

গ্রীষ্মের ছুটিতে আসা পান্তা বুড়ি।


তুমি আমার খরশ্রোতা পদ্মানদীর 

বক্র ঢেউয়ের অবাধ জলধারা।

তুমি আমার সন্ধ্যাকাশে সদা দীপ্ত 

জাজ্বল্যমান সক্রিয় ধ্রুবতারা।


তুমি আমার শব্দের বিপুল সমাহার

কবিতার মায়াজালের আলপনা।

তুমি আমার স্বপ্নপুরীর কল্পলোকের

মায়াবী নীলপরির অদ্ভুত কল্পনা।


তুমি আমার হেমন্ত বেলায় কৃষকের

রূপালি আমন ধানের ক্ষেত।

তুমি আমার প্রশান্তি জাগানিয়া বসন্তে

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির আর্জি অনভিপ্রেত।


তুমি আমার কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসা

রাতুল রাঙা প্রসূনের উপমা।

তুমি আমার স্মৃতির মণিকোঠায় 

চির ভাস্বর শুদ্ধতম প্রিয়তমা।


প্রিয়তমা সমীপেষু

১৬ জানুয়ারি ২০২২, রংপুর।


ওগো শীতের বুড়ি,

তোমায় নিয়ে শব্দ গাঁথি

আমার গীতি কবিতায়,

তোমায় নিয়ে আকাশ আঁকি

সারা রাত্রি নির্ঘুম নিরালায়।


ওগো বসন্ত বুড়ি,

ছবি এঁকেছি তোমার আকাশ গঙ্গায়

তারাকারা মেশানো রং তুলি দিয়ে,

তোমার জলছবি ভাসাই ত্রিমোহনায়

দেখি প্রতিদিন অবাক চেয়ে।


ওগো বর্ষা বুড়ি,

বর্ষার জলে শুনি শব্দ তোমার

মেঘের দেশে উদ্দাম অহর্নিশ বিচরণ

একি বাস্তব নাকি ভ্রান্তি আমার!

দিকহারা নির্ণয়ে তোমার মনের ব্যাকরণ।


তবুও গো বলছি বুড়ি,

গ্রীষ্মের খরতাপে দগ্ধ হব,

শরতের শুভ্র মেঘের ডানায় যাব ভেসে 

হেমন্ত উৎসবে প্রফুল্ল চিত্ত মম

নবান্নের আমেজে স্নাত হতে যাব তোমার দেশে।


হে কবি


১৮ অক্টোবর ২০২১, রংপুর।


হে কবি,

তোমার কবিতায় কৃষকের ঘামে

হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে ফলা সোনালি ফসলের খতিয়ান কই?

তোমার কলমে বেপরোয়া দুর্নীতিবাজ

জাতি ধ্বংসকারী তস্করদের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠা ভিসুভিয়াসের

সেই লেলিহান শিখা কই?

তোমার চলনে বলনে আগেকার দিনের চে, লেলিন,

মুজিবের বিপ্লবী ভাবধারা গেল কই?


হে কবি,

আজ তোমার অবিনাশী গানে ধ্বজ চেতনার নির্লজ্জ 

চামুন্ডাদের হাতে ধর্ষিত বামার অভিযোগ বাণী গেল কই?

সভ্যতার শত্রু  মোঙল হানাদার দোসরদের ভয়ে

তোমার চিত্ত সদা কম্পমান কেন?

হে কবি,

কেন আজ তোমার কলমখানা এতিমের আর্তনাদ, সহায়

সম্বলহীন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর গগনবিদারী চেঁচানিতে 

ভ্যান উইঙ্কলের ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন?


হে কবি,

তবে তুমিও কি ডুব দিয়েছো আয়েশী সাগরে,

সেই কূপমন্ডুক কিছু দস্যু সাংবাদিকদের মত,

সর্বগ্ৰাসী লুটেরা রাজনৈতিক নেতাদের মত,

তুমিও কি অবশেষে আখের গোছানোর অন্তীম

খেলায় মেতে উঠেছো?


হে কবি,

তবে আজ থেকে আর কোনদিনও নিজেকে

বিপ্লবী সুকান্ত নজরুলদের উত্তরসূরী দাবি করতে এসোনা।

তোমার কলুষিত ভোগবাদি কবিসত্ত্বাকার কদর্যরূপ 

নব প্রজন্মের কাছে আর উন্মোচিত করোনা।

আমাদের এই প্রজন্ম তোমার পদভ্রষ্ঠতার দিনলিপির খবর রাখে।

তোমার বেপথে ধাবিত হওয়া ও ছলচাতুরির 

রোজনামচা পড়ার মত আগ্ৰহী মন আজকের তরুণ প্রজন্মের নেই।

হয়তো আজকে তুমি ঘোলাপানিতে কবিসত্ত্বার বিপুল

 দেনদরবারে মত্ত হয়ে আগামীর সোনালি তপন কিরণে স্নানে যাওয়ার

তড়িঘড়ি প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছো।


তবে শুনে রাখ, দিন বরাবরের মতই যায় ভালো, আসে দিন খারাপ।

ধ্বংসের দামামা বেজে উঠবে ধরনীতে যখন পূঞ্জীভূত হবে পাপ।


শ্যাম বালিকা বিহনে

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, আব্দুলপুর, নাটোর।


কিসের লাগিয়া গো সখী

প্রাণটা আজ জ্বলিয়া যায়

কার বিহনে এই ফাগুনে

চারিদিকে শুধু অনল দেখি।


কে ডাকে মোরে রুদ্ধস্বরে

হৃদ মাজারের শ্রান্ত স্রোসে

কিসের ঢেউ বয়ে যায়!

অবিরত মোর ভুবনজুড়ে।


কিসের এত অনল দহনে,

কলিজা জুড়ে নীলবেদনা!

কিসের তাপে মন মন্দির

আজ ঝলসে ওঠে সন্তাপে।


কেন গো সখি এত মর্মপীড়া

কিসের লাগি পুষ্প শুকায়!

বসন্তের এমন নব উন্মাদনায়

হিম রক্তস্রোতের বন্ধ ক্রিয়া।


কেন গো এমন নিরব শীতলতা

বাসনা জাগে উষ্ণ আলিঙ্গনের

শূন্য লাগে অপরাহ্ণের তপোবনে

তুমি বিহনে চিত্তে নিঠুর স্থবিরতা।


তুমিহীনা দাড়িয়ে আমি গঙ্গাপাড়ে

ক্লান্ত সূর্য পশ্চিমাকাশে অস্তাচলে

তোমার স্মৃতি বিজড়িত পদরেখা

অনুসরণে কেন আজ দুঃখ বাড়ে!


কেন গো শ্যাম বালিকা তুমি বিহনে

একলা গগন আমার অশ্রূ বিলাসী,

পৌষ সংক্রান্তি লগ্নে শূন্য পুষ্পোদ্যান

একফোঁটা দাও কোমল অনল এ ফাগুনে।


তোমার মাঝে নেই আমি


২৯ ডিসেম্বর ২০২১, রংপুর।

----------------------------------

শরতের শুভ আকাশের কল্পিত সেই চোখ

আজও মনের জগতে স্থায়ীভাবে প্রোথিত।

গগন সীমান্তে ম্রিয়মান ফ্যাকাসে মেঘের

আবরনে গভীর কল্পনায় তোমার চুলগুচছ

আজও বড় যনতে খোঁজাখুঁজি করি।

দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশের দিকে আজও

অবসর পেলে তোমাকেই খুঁজে পাই।

তোমাকেই খুঁজে এবং প্রতিবারই তোমাতেই

হারাই, সারাদিন সারাক্ষণ সুদূর নীলিমায়।

কখনোই জানতে দেইনি, বুঝতে দেইনি

ধরতে দেইনি কখনো আমার কালবেলায়

অঙ্কন করা সেই নারী অবয়ব।

যার অর্ধেকটা বাস্তব, অর্ধেক শুধুই কল্পনা।


আমি জানি তুমি আদৌ আমার মত নও,

কখনোই আমার আকাশ পানে চেয়ে দেখার,

কল্পনার জগতে হারিয়ে নিজেকে খোঁজার

সময় তোমার হয়না।

কল্পনা বিলাসে যে অসুখ তোমায় আজও

তাড়িয়ে বেড়ায়, কখনোই তা আমাকে ভাবতে

দেয় না।

তোমার দিগন্ত বিস্তৃত মেঘমালার কালো রং

সেখানে আর কখনোই রঙ্গিন ছবি আঁকা

হবে না। তাইতো আমার আকাশ জুড়ে

আজও তুমি আছ, আমি নেই তোমার

ধ্যান, জ্ঞান কিংবা কল্পনায়।


অযোগ্যদের খপ্পরে দেশ

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১,রংপুর।


অযোগ্য লোক যোগ্য আসনের কখনোই রাখতে পারে না সন্মান,

অযোগ্যতা  ঢাকতে ছড়িয়ে বেড়ায়  জ্ঞানী গুণীদের নামে দুর্নাম।

অহঙ্কার ও দাম্ভিকতার চরম সীমানা লঙ্ঘন করা তাদের ধর্ম,

ফাঁটা ঢোলে দিবারাত্রি লাঠি পিটিয়ে জাহির করাই তাদের একমাত্র কর্ম।

সরিষা, সয়াবিন কিংবা নারকেল, তেল মারাই তাদের কাজ,

কার্যোদ্ধারে এদের কারো পায়ে পড়তে লাগেনা দ্বিধা, একটুও লাজ।

নতুন কিছু শিখতে গেলে বনবনিয়ে ঘুরে ওঠে তাদের মাথা,

বুক ফুলিয়ে দুনিয়ারজুড়ে ছড়িয়ে বেড়ান মেকি সফলতার কথা।

মাসের শেষে শয়তানি হেসে নগদ নরেশের হিসাব করেন কষে,

বেপরোয়া ভাবে দক্ষিণার জোরে সবাইকে শাসিয়ে বেড়ান চষে।

সারা বছর এরা থাকেন সুখে, সবখানেই তাদেরই হচ্ছে জয়,

এমন লোকদের আগ মাড়াতে প্রাণে জাগে বড্ড ভীষণ ভয়।

সারা দেশের যত মাথা মোড়ল আজ সবাই এদের কেনা,

বেশধারী এরা চতুর সাধু সুফিজন , সহজেই যায়না চেনা।

এরাই করছে রাম রাজত্ব, নিরঙ্কুশভাবে কুরশির ধরে লাগাম,

অর্থের জোরে জ্ঞানীগুণীদের বানিয়ে নিয়েছে চিরস্থায়ী গোলাম।

গরুর কাজ ছাগল গাধারা  কখনোই করতে পারেনি পরিপূর্ণ,

এদেশে এরাই এখন লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে বিসমিল্লায় করছে সাঙ্গ।

দেশ বাঁচাতে অকালকুষ্মান্ডদের চটজলদি রাশ ধরতে হবে টেনে,

নচেৎ বাছাধন আজীবন তোমাদের পরাধীনতা নিতে হবে মেনে।


আকতারুল ইসলাম

বিএ অর্নাস, এমএ মাস্টার্স 

তথ্য বিজ্ঞান ও লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়



Post a Comment

0 Comments